পিয়ানোর চতুষ্কোণ, তাতে ‘মাত্রা’ হলো মাত্রাছাড়া!

Join Trial or Access Free Resources

(২১-শে ফেব্রুয়ারীর প্রতি)

‘মাত্রা’ অথবা ডাইমেনশন কাকে বলে? একটু তলিয়ে ভাবতে গেলে কিন্তু সব গোলমাল হয়ে যায়। এই এক টুকরো লেখায়, আমরা ডাইমেনশন নিয়ে একটু ভাবা প্র্যাকটিস করব।

একটা বিন্দু-র dimension কি? একটা সরলরেখারই বা dimension কি? একটা কাগজের টুকরোর dimension কি হবে? চট করে ভাবলে মনে হয় যে

  1. বিন্দুর মাত্রা ০
  2. সরলরেখার মাত্রা ১
  3. সমতল কাগজের টুকরোটার মাত্রা ২

কিন্তু কেন এরকম মনে হচ্ছে? তুমি বলতে পারো যত গুলো সংখ্যা লাগে কোনো বিন্দুর ঠিকানা অথবা coordinate লিখতে, মাত্রাও ঠিক তত।

  • গোটা ভুবনটাই যদি একটা বিন্দু হয়, তাহলে তো তার ‘ঠিকানা’ লিখতে কোনো সংখ্যাই লাগবে না। অতএব বিন্দুর মাত্রা শুন্য।
  • তেমনি একটা সরলরেখায় কোনো একটা বিন্দুকে ০ হিসেবে চিহ্নিত করে দাও। তারপর অন্য যেকোনো বিন্দুকে একটা মাত্র সংখ্যা দিয়ে ‘লিখে’ ফেলা সম্ভব।

    যেমন ধরো -৭ এ যেতে চাইলে ০ থেকে শুরু করে বাঁয়ে যেতে হবে ৭ পা। আবার ১৩.৩ এ যেতে চাইলে, ০ থেকে শুরু করে ডাইনে যেতে হবে ১৩.৩।

    যেহেতু একটাই সংখ্যা দিয়ে যেকোনো বিন্দুর ঠিকানা বলা সম্ভব হচ্ছে, অতএব সরলরেখার মাত্রা হলো ১।
  • একই রকমের যুক্তি দিয়ে বলা যায় সমতল কাগজের মাত্রা হচ্ছে ২।

কাগজের টুকরো দ্বিমাত্রিক। প্রতিটা বিন্দুর ঠিকানা লেখার জন্য দুটো সংখ্যা দরকার।

বেশ। আরেকটু তলিয়ে ভাবা যাক।

একটা আঁকাবাঁকা রেখার মাত্রা (ডাইমেনশন) কি হবে? যেমন ধরো এই ঢেউ-এর মত রেখাটার dimension কত ?

ঢেউ-এর মাত্রা কি হতে পারে?

তুমি বলবে, ‘এ তো মনে হচ্ছে একটা সুতো এঁকে বেঁকে পড়ে আছে। টান টান করে দিলেই সরলরেখা হয়ে যাবে। অতএব-এর মাত্রা নির্ঘাত ১।’

যদি এই যুক্তিটা মানতে পারো, তাহলে কিন্তু মুশকিলের দিকে এক পা বাড়িয়ে দিলাম। যুক্তিটা আরেকটু স্পষ্ট করে বললে দাঁড়াচ্ছে এরকমঃ

একটা সরলরেখাকে (সুতোকে) ঘুরিয়ে বাঁকিয়ে যা যা বানানো যায়, তাই ১-মাত্রিক।

মুশকিলটা করলেন ইতালিয় গণিতজ্ঞ জিয়োসিপ্পে পিয়ানো। ১৮৯০ সাল নাগাদ তিনি প্রমাণ করে ফেললেন যে একটা সুতোকে ঘুরিয়ে বাঁকিয়ে একটা গোটা কাগজের টুকরো ভরাট করে ফেলা যায়!

পিয়ানো ভরলেন চতুষ্কোণ

পিয়ানোর কায়দাটা খানিকটা এরকম।

  • প্রথমে একটা কোণের মত এঁকে ফেলো।
প্রথম ধাপ
  • তারপর সেই কোণটাকে ছোটো করে ফেলো যাতে তার সাইজ অর্ধেক হয়ে যায়। তারপর তার ৪টে প্রতিলিপি বানিয়ে ঘুরিয়ে নাড়িয়ে দ্বিতীয় ধাপের ছবির মত করে রাখো। নীচের ছবিতে ৪টে ‘কোণ’ আছে। ২টো সবুজ আর ২টো গোলাপি।
দ্বিতীয় ধাপ
  • এইবারে এই পদ্ধতিটা রক্তবীজের মত ডালপালা মেলতে থাকবে।
    • আবার সাইজ অর্ধেক করো।
    • আবার চারখানা প্রতিলিপি বানাও।
    • আবার ঘুরিয়ে, নাড়িয়ে নীচের ছবির মত করে রাখো।
রক্তবীজের মত সে বেড়ে উঠছে
  • পিয়ানো প্রমাণ করলেন যে অসীম সংখ্যকবার এরকম করলে যে বস্তুটি পাওয়া যাবে সেটি চতুষ্কোণের মধ্যে সব বিন্দু দিয়ে যাবে। অর্থাৎ চতুষ্কোণ ভরাট হয়ে যাবে। অথচ সুতো একটাই। তাকেই ঘুরিয়া বাঁকিয়ে রাখা হচ্ছে প্রতি ধাপে। (Continuous Map from [0,1] to unit square)। অতএব টান দিলে সে সোজা হয়ে যাবে!

তাহলে কি কাগজের টুকরো একমাত্রিক? একমাত্রিক সুতোকে বাঁকিয়ে ঘুরিয়ে তাকে ভরাট করে ফেলা যাচ্ছে যে!

এবার কি হবে?

পরের পর্বে সে নিয়ে আড্ডা দেওয়া যাবে।

More Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram